ব্যক্তিগত আর্থিক পরিকল্পনা
ব্যক্তিগত আর্থিক পরিকল্পনা
অর্থ আমাদের জীবনে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা আমাদের পরিবারে এ নিয়ে সঠিক শিক্ষা দেওয়া হয় না । এমনকি কিছু ক্ষেত্রে এ সম্পর্কে আমাদের অভিবাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে ও সঠিক ধারনা থাকে না। অর্থের সঠিক ব্যবহার না হলে সফল হওয়া কখনোই সম্ভব নয় । কিছু দিন পর হয়তো আমরা টাকা আয় করতে শুরু করব । তাই টাকা কিভাবে খরচ করতে হবে তা জানা থাকা জরুরি, বিশেষ করে আমাদের মতো তরুণ তরুণীদের জন্য ।
অর্থ ব্যায়ের সময় নিচের ব্যাপার গুলি মাথায় রাখা উচিত।
১। Insurance বা বিমা :
অনিশ্চিত জীবনে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে । আপনার কোনো বিমা থাকুক বা না থাকুক আপনার স্বাস্থ্য বিমা আর জীবন বিমা থাকা উচিত । এর কারন হয়তো আপনারা করোনা কালে বুঝতে পেরেছেন । আপনার সাথে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায় তাহলে বিমা কোম্পানি চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকে ।
২। উচ্চ মুল্যের জিনিস কেনা যাবে না:
আমরা এখনো তরুন আমাদের কাছে দামি কোনো কিছু থাকবে না তাই স্বাভাবিক । অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কোনো কিছু কেনা যাবে না যা আমাদের প্রয়োজন নেই। যেমন : দামি মোবাইল, দামি বাইক । সাধারনত এরকম দামি কিছু নগদ টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব নয়, সেই কারণে ঋণ, EMI অথবা কিস্তি নিতে হয় । যা মোটেও নেওয়া যাবে না
৩। ঋণ, EMI ও কিস্তি নেওয়া যাবে না :
ঋণ অথবা EMI অর্থনৈতিক ভাবে আপনাকে ধ্বংস করে দিতে পারে । অতি জরুরি কারন ছাড়া ঋণ, EMI অথবা কিস্তি নেওয়া যাবে না । বিশেষ করে সেটি যখন আপনার প্রয়োজনের মধ্যে পড়ে না । যেমন : দামি মোবাইল, দামি বাইক কিংবা ফ্লাট । ফ্লাট কেন ? ধরি, ৪০ লক্ষ টাকা ব্যাংক হতে ঋণ নিয়ে আপনি একটি ফ্লাট কিনলেন । ঋণের মেয়াদ ২০ বছর ও সুদের হার ১০% (বাংলাদেশে গড় সুদের হার ৯ - ১৫% ) । তাহলে আপনাকে প্রতি মাসে ৩৮,৬০০ টাকা ব্যাংকে দিতে হবে । আপনাকে মোট সুদ দিতে হবে ৫৩ লক্ষ এবং আপনাকে মোট পরিশোধ করতে হবে ৯৩ লক্ষ টাকা *[ Dutch-Bangla bank Loan calculator , Inflation included ] এখনো যদি আপনি বুঝতে না পারেন তাহলে আর কিছু করার নেই।
শখের দামি জিনিস যদি তরুণ বয়সে না কিনি তাহলে কখন কিনব ?
৪। 50 : 30 :20 Rule :
Elizabeth Warren তার বই All Your Worth : The Ultimate Money Plan এ তিনি ৫০ঃ৩০ঃ২০ নিয়মের কথা বলেছেন অর্থাৎ আপনার মোট আয়কে ( আয়কর বাদে ) তিন ভাগে ভাগ করবেন ৫০%, ৩০%, আর ২০% । আপনার মোট আয়ের ৫০% খরচ করবেন আপনার প্রয়োজনের উপর ( খাবার, চিকিৎসা, বাসস্থান ) । মোট আয়ের ৩০% খরচ করবেন আপনার শখ ও স্বপ্নের উপর । আর বাকি ২০% ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করবেন ।
বিনিয়োগের জন্য যে ২০% এর যত টাকা হয় তার ৭০% বিনিয়োগ করবেন উচ্চ ঝুকি যুক্ত স্থানে (শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড ) । অনেকেই হয়তো বলবে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ জুয়ার মতো । কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয় । আমরা এখনো তরুণ, আমাদের উপর আমাদের পরিবার নির্ভরশীল নয় । যে কারণে আমাদের ঝুকি নেওয়ার ক্ষমতাও অনেক বেশি । এটা সত্য শেয়ার মার্কেট উপর-নিচ হয় । কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ার মার্কেট সবসময় উপরে উঠে । তাছাড়া বুঝে বিনিয়োগ করলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে আসে । বাকি ৩০% ঝুকি মুক্ত স্থানে (সরকারি বন্ড, ট্রেজারি বিল ) বিনিয়োর করতে পারেন । এই বিনিয়োগের টাকা ভুলেও ব্যাংকে FD ( Fixed Deposit ) করাবেন না । কারণ FD তে সুদের হার ২-৩% আর মদ্রাস্ফিতির হার ৬.২% অর্থাৎ ৩-৪% ক্ষতি ।
৫। Emergency Fund :
চলমান জীবনে নানা ধরনের বিপদ আসবেই । এমন অবস্থাকে সামলাতে জরুরী তহবিল তৈরি করা উচিত । এটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হবে করোনা কাল যখন সবার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিল । করোনার মতো পরিস্থিতি হয়তো আর আসবে না কিন্তু খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যে কোনো সময়ই আসতে পারে । যার জন্য আমাদের আগে থেকে প্রস্তুত থাকা উচিত । এইরকম জরুরী পরিস্থিতির জন্য আপনার প্রতি মাসের প্রয়োজনীয় খরচের ( থাকা - খাওয়ার খরচ ) কমপক্ষে ৬ গুন অর্থাৎ ৬ মাস চলার মতো টাকা আপনার জমা রাখতে হবে । যদি আপনার প্রতি মাসের প্রয়োজনীয় খরচ ১০,০০০৳ হয় তবে আপনার কমপক্ষে ৬০.০০০৳ থাকতেই হবে । আপনি চাইলে ১২ মাসের খরচও জমাতে পারেন । মনে রাখবেন এটি জরুরী তাই বিনিয়োগ কিংবা নিজের খরচ কমিয়ে যত তাড়াতাড়ি এই জরুরী তহবিল তৈরি করবে ততই ভালো। এই টাকাটা ব্যাংকের আলাদা হিসাবে রাখবেন । এই টাকার ১০% নগদে রাখবেন, ২০% ব্যাংকে চলতি হিসাবে অথবা ডেবিট কার্ডে রাখবেন । আর বাকি ৭০% ব্যাংকে FD তে জমাতে পারেন । অথবা ক্রেডিট কার্ড রাখতে পারেন । যখন প্রয়োজন হবে তখন ক্রেডিট কার্ড হতে নিবেন পরে FD ভেঙ্গে টাকাটা পরিশোধ করবেন । তবে এর সাথে বিমা থাকাটাও জরুরি ।
৫। Invest on building skills :
বর্তমান যুগ অনেক দ্রুত পরিবর্তনশীল । এই যুগের সাথে ভালো ভাবে বেঁচে থাকতে হলে জ্ঞান, যোগ্যতা, দক্ষতা বাড়ানোর উপর বিনিয়োগ করতে হবে । পড়ালেখার সাথে সাথে অনলাইন মাধ্যমে ডিপ্লোমা কিংবা ডিগ্রি করতে পারি Upgrade, skillshare, কিংবা coursera এর মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম থেকে । তাছাড়া Google এর Digital Garage ফ্রি কোর্সও করা যায় ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ - কখোনোই অতিরিক্ত লোভ করা যাবে না । যেখানে অতিরিক্ত লাভে সেখানেই প্রতারণা ( Evaly, Destiny ) । ধনি হওয়ার কোনো শরটকাট নেয় । আপনাকে পরিশ্রম করতেই হবে। ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি বুঝে বিনিইয়োগ করা শুরু করবেন ততই ভালো।
উল্লিখিত কোনো তথ্যই আমি নিজ থেকে তৈরি করিনি । এসব তথ্য সফল মানুষদের জীবন ও তাদের লেখা বই থেকে নেওয়া । যদি আপনি নিজেকে সফল দেখতে চান তাহলে আপনাকে এগুলো অনুসরণ করতে হবে ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন